করাচি, ১২ জুলাই ২০২৫: পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল হুমায়রা আসগর আলির মৃত্যু নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। গত ৮ জুলাই করাচির ডিফেন্স হাউজিং অথরিটির একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তার পচে যাওয়া মরদেহ উদ্ধারের পর ফরেনসিক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ৩২ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর মৃত্যু হয়েছিল প্রায় নয় মাস আগে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে। এত দীর্ঘ সময় পর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পাকিস্তানের শোবিজ জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।করাচি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হুমায়রার মরদেহ চরম পচনধরা অবস্থায় উদ্ধার হয়। ফোন রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তার মোবাইল ফোন সর্বশেষ ব্যবহৃত হয়েছিল ২০২৪ সালের অক্টোবরে। সামাজিক মাধ্যমেও তিনি সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে শেষবার সক্রিয় ছিলেন। অ্যাপার্টমেন্টের বিদ্যুৎ সংযোগও বিল পরিশোধ না করায় অক্টোবর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ফ্ল্যাটে কোনো মোমবাতি বা বিকল্প আলোর উৎস পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ফ্রিজে থাকা খাবারের মেয়াদ ছয় মাস আগে শেষ হয়ে গিয়েছিল, এবং পানির নলগুলো বহুদিন ব্যবহার না হওয়ায় শুকিয়ে গিয়েছিল। হুমায়রা ২০১৮ সাল থেকে করাচির ডিফেন্স ফেজ-৬-এর ওই ফ্ল্যাটে একা বসবাস করছিলেন। ভাড়া বকেয়া থাকায় বাড়ির মালিক আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ গত মঙ্গলবার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তারা সর্বশেষ তাকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে দেখেছিলেন। অবাক করা বিষয়, ফ্ল্যাট থেকে কোনো দুর্গন্ধ ছড়ায়নি, কারণ নিচতলার অ্যাপার্টমেন্টটি খালি ছিল।
হুমায়রার পরিবার প্রথমে তার মরদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। তার বাবা জানান, গত দুই বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন ছিল। তবে পরে তার ভাই নবীদ আসগর মরদেহ গ্রহণ করে লাহোরে নিয়ে যান এবং পারিবারিকভাবে দাফন সম্পন্ন করেন।
‘তামাশা ঘর’ রিয়েলিটি শো এবং ‘জালেবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন হুমায়রা। থিয়েটার, মডেলিং, চিত্রকলা ও গ্রাফিক ডিজাইনে প্রশিক্ষিত এই শিল্পী গত সাত বছর ধরে একাকী জীবনযাপন করছিলেন। পুলিশ এখনো তার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে পারেনি। তদন্তে জানা গেছে, সম্ভবত খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে তার মৃত্যু হতে পারে, তবে ফরেনসিক রিপোর্টের উপর নির্ভর করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হুমায়রার মৃত্যু পাকিস্তানের বিনোদন জগতে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। এই ঘটনা সমাজে একাকী বসবাসকারী মানুষদের প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাব গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।