Saturday, August 23, 2025

কৃতি শ্যাননের বলিউড যাত্রা: প্রকৌশল থেকে জাতীয় পুরস্কার, অনুপ্রেরণার এক গল্প

 বলিউডের ঝলমলে জগতে নিজের আলাদা অবস্থান গড়ে তুলেছেন কৃতি শ্যানন। আজ তিনি প্রথম সারির অভিনেত্রীদের একজন। অথচ ছোটবেলায় অভিনয়ের কোনো স্বপ্নই ছিল না তাঁর। পড়াশোনা, বিশেষ করে প্রকৌশলের প্রতি ছিল তাঁর ঝোঁক। প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর ঘটনাচক্রে মডেলিংয়ে পা রাখেন তিনি। এরপর বিজ্ঞাপনের পর্দা থেকে ধীরে ধীরে বড় পর্দায় পৌঁছে যান কৃতি, শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ ও কঠিন পথচলা।

২০১৪ সালে ‘হিরোপন্তি’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় কৃতির। টাইগার শ্রফের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রথম ছবিতেই দর্শকের মন জয় করেন তিনি। বক্স অফিসে সফল এই ছবি তাঁকে পরিচিতি এনে দিলেও পরবর্তী পথচলা ছিল চ্যালেঞ্জিং। ফিল্মি পরিবারের বাইরে থেকে আসা এই অভিনেত্রীকে প্রবল প্রতিযোগিতা ও সুযোগের সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়। তবু ধৈর্য, অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাসের জোরে এগিয়ে যান কৃতি।

‘দিলওয়ালে’, ‘বরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’, ‘হাউসফুল ৪’, ‘বচ্চন পান্ডে’, ‘ভেড়িয়া’, ‘আদিপুরুষ’—একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। প্রতিটি ছবিতে তাঁর অভিনয় আরও পরিণত হয়েছে। তবে ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিমি’ ছবিতে তিনি পৌঁছান সাফল্যের শীর্ষে। মাতৃত্বের জটিলতা ও মানসিক টানাপোড়েনকে অসাধারণ অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলে কৃতি জিতে নেন সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

সম্প্রতি সিএনএন-নিউজ ১৮ আয়োজিত ‘সি-শক্তি ২০২৫’ অনুষ্ঠানে কৃতি তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা খোলামেলাভাবে ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, “চলচ্চিত্রজগতে টিকে থাকতে হলে জেদি হতে হবে, আবেগ থাকতে হবে। শর্টকাট বলে কিছু নেই। কেউ এসে সুযোগ দিয়ে যাবে না। আউটসাইডার হলে লড়াইটা আরও কঠিন। এখানে বিনা পয়সায় কিছুই পাওয়া যায় না—না খাবার, না কাজ।”

নেতিবাচক সমালোচনা নিয়ে তিনি বলেন, “মানুষ আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবে। কেউ বলবে খাটো, কেউ বলবে লম্বা, কেউ বলবে পাতলা। শরীর নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ চলতেই থাকবে। কিন্তু কেউ বলবে না—তুমি পারবে। তাই নিজের প্রতি আস্থা রাখা সবচেয়ে জরুরি।” নবীনদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, “চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। সুযোগ পেতে সময় লাগলে সেটাকে ব্যর্থতা ভাববেন না। এই সময়টা নিজেকে উন্নত করার সুযোগ। সঠিক সময়ে সবকিছু ঘটতে শুরু করবে।”

সম্প্রতি কৃতি অভিনীত ‘ক্রু’ ছবিতে কারিনা কাপুর ও টাবুর মতো প্রভাবশালী অভিনেত্রীদের সঙ্গে সাবলীল অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এছাড়া নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দো পাত্তি’ ছবিতে যমজ বোনের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভা। এই ছবির মাধ্যমে তিনি নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘ব্লু বাটারফ্লাই ফিল্মস’ ব্যানারে প্রযোজক হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করেছেন।

কৃতির হাতে এখনো রয়েছে বেশ কিছু বড় বাজেটের প্রকল্প। আনন্দ এল রাইয়ের ‘তেরে ইশক মে’ ছবিতে দক্ষিণি তারকা ধানুশের সঙ্গে দেখা যাবে তাঁকে। ছবিটির শুটিং শেষ, এবং এটি ২৮ নভেম্বর মুক্তি পাবে। এছাড়া ‘ককটেল ২’-এর মতো বড় প্রযোজনার ছবিতেও কাজ করছেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনেও কৃতি আলোচনায় থাকেন। প্রেম, বন্ধুত্ব বা পারিবারিক সম্পর্ক—সব ক্ষেত্রেই তিনি খোলামেলা ও আত্মবিশ্বাসী। অভিনয়জগতে স্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপনের চেষ্টা করেন। সমালোচকদের মতে, ফিল্মি পরিবারের বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য কৃতির পথচলা এক বড় অনুপ্রেরণা। তিনি মনে করিয়ে দেন, বলিউডে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। ধৈর্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে একদিন সাফল্য নিশ্চিতভাবে ধরা দেবে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.